সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:: পুলিশের গুলিতে নিহত শিশু সুরাইয়ার পরিবারে শোকের মাতম থামছে না। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন শিশুটির মা-বাবা ও স্বজনেরা। তাঁদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে গ্রামের পরিবেশ। এদিকে এ ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলা হয়নি। এ নিয়ে চলছে ধোঁয়াশা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে গ্রামবাসী।
গত বুধবার ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে বাচোর ইউপির ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ফল ঘোষণা নিয়ে পরাজিত দুই প্রার্থী সমর্থকের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের ছোড়া গুলিতে মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় মারা যায় সুরাইয়া।
সেদিনের বীভৎসতার বিবরণ দিয়ে সুরাইয়ার মা মিনারা বেগম বলেন, ‘একটা বিকট শব্দ হয়। আমার বুকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছিলাম সোনামানিককে। শরীরের সব অংশ ঠিক থাকলেও শুধু মাথার খুলি নেই আমার মেয়েটার।’
কুলখানিতে ওসি
গতকাল শুক্রবার দুপুরে সুরাইয়ার কুলখানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপস্থিত হয়ে রাণীশংকৈলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইন্দ্রজিৎ সাহা পরিবারটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাহিদ ইকবাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুল হকসহ অনেকে। ঘটনার দিন রাতে উত্তেজিত জনতা ওসি জাহিদ ইকবালকে দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে জনরোষ থেকে ওসিকে উদ্ধার করে। মীরডাঙ্গী মহেষপুর গুচ্ছগ্রামে পরিবার নিয়ে ভাঙাচোরা ঘরে থাকেন সুমাইয়ার বাবা বাদশা মিয়া। তিনি পেশায় দিনমজুর। পরিবারটিকে সরকারি একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নতুন এই ঘরে কয়েক দিন পরেই উঠত সুরাইয়ার পরিবার। নতুন ঘরে ঠাঁই হলো না শিশুটির।
মামলা নিয়ে ধোঁয়াশা
সুরাইয়ার নিহতের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত দলের প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রামকৃষ্ণ বর্মণ। তবে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে গ্রামবাসী। এদিকে সুরাইয়ার নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। এ প্রসঙ্গে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খতিবর রহমান জানান, তাঁর কাছে মামলার এজাহারে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। তবে জাহিদ ইকবাল বলছেন, এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা খতিবর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ৩০০-৩৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা রের্কড হয়েছে।
ওসি মামলার কথা অস্বীকার করছেন জানালে খতিবর বলেন, থানায় তাঁর কাছে এজাহারে স্বাক্ষর নেওয়ার পর তিনি সেখান থেকে চলে আসেন। মামলা রেকর্ড হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত নন। মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাণীশংকৈল থানার ওসি জাহিদ ইকবাল বলেন, এ ঘটনায় মামলা এখনো রেকর্ড হয়নি।
এদিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, মামলা একটি হওয়ার কথা। তবে এতে কেউ অযথা হয়রানি হবে না। রাতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খতিবর রহমান এজাহারে স্বাক্ষর দিয়েছেন।